রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি – ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান

আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি কে ঘিরে। রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি কোথায় অবস্থিত, ইতিহাস, কাঠামো, কেন যাবেন, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এ নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন টি সাজানো হয়েছে। আশা করি, প্রতিবেদনটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।

রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি একটি পুরাকীর্তি বা প্রত্নস্থল। এটি রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি, রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ি, রাজা হরিশচন্দ্রের ভিটা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

নামকরণ

রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি, রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ি, রাজা হরিশচন্দ্রের ভিটা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিক কিছু সংশয় ছাড়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞের ধারণা অনুযায়ী ঢাকা থেকে প্রায় ২৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে প্রাচীন বংশাবতী বা অধুনা বংশী নদীর বাঁ তীরে অবস্থিত ছিল পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের শাসনাধীন সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানী। এ রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই পরবর্তীকালে সাভার নামের উৎপত্তি হয়েছে।

অবস্থান

ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সাভার উপজেলার অন্তর্গত সাভার পৌরসভার মজিদপুরে (সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড হতে পূর্ব দিকে) অবস্থিত।

  • জেলাঃ ঢাকা
  • উপজেলাঃ সাভার

ইতিহাস

রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ি বা ঢিবি ঊনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটিচাপা এই স্থানটিকে রাজবাড়ি ঢিবি হিসেবে চিহ্নিত করত। ১৯১৮ সালের দিকে রাজবাড়ি-ঢিবির কাছাকাছি গ্রাম রাজাসনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করেন। এই খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রত্নবস্তু ও গুপ্ত রাজবংশের অনুকৃত মুদ্রাস্মারক। এতে সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে ১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে হরিশচন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবিতে খননকাজ চালানো হয়।

১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি উৎখননের ফলে অনাবৃত হয় মাঝারি আকারের একটি নিবেদনস্তূপ এবং দক্ষিণে একটি বৌদ্ধ বিহারের ভগ্নপ্রায় অবকাঠামো। খ্রিস্ট্রীয় সপ্তম শতকে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম সভ্যতা সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্র ছিল বলে বোঝা যায়। হরিশ্চন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবির উৎখননে অনাবৃত হওয়া বিহারটির মধ্যে একাধিক পুনর্নির্মাণ এবং একাধিক মেঝের চিহ্ন লক্ষ করা যায়। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে চারটি স্তর অনুধাবনযোগ্য। চার স্তরের নির্মাণ কাঠামো পাওয়া যাওয়ায় বোঝা যায়, লম্বা সময় ধরেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

খননকাজের সময় বিহারের ওপরের স্তর থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এবং খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকের ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানী বুদ্ধ ও তান্ত্রিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে প্রাপ্ত অনেক ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি দেখে বোঝা গেছে যে, মহাযানী বৌদ্ধ মতাদর্শের একটি কেন্দ্র ছিল এটি। এছাড়াও এখানে নানা ধরনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধূতি পরিহিত, কিরিট মুকুট, চুড়ি, হার, কোমরবন্ধ ও বাজুবন্ধ সজ্জিত লোকেশ্বর-বিষ্ণু মূর্তি, পদ্মপানি, ধ্যানী বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর ও প্রজ্ঞা পারমিতা প্রভৃতি ভাস্কর্য নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া গেছে। শিল্পশৈলী বিবেচনায় এসব প্রত্নবস্তু খ্রিষ্টীয় সাত থেকে আট শতকের নিদর্শন বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। বর্তমানে এসব নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

কাঠামো

হরিশচন্দ্রের ঢিবি উৎখননের ফলে অনাবৃত হয় মাঝারি আকারের একটি নিবেদনস্তূপ এবং দক্ষিণে একটি বৌদ্ধ বিহারের ভগ্নপ্রায় অবকাঠামো। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে চারটি স্তর অনুধাবনযোগ্য।

কেন যাবেন?

ভ্রমন পিপাসু মানুষ দের কে যদি এই কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে তারা এই কথা অহেতু হাসির ছলে উড়িয়ে দিবে । কারন, ভ্রমন পিপাসু মানুষদের কাছে এই কথা মূল্যহীন। তবুও বলি,

পুরাকীর্তিটি সহ দেখার মতো অনেক কিছু আছে, সব মিলিয়ে দেখে ভালো লাগবে।

টিকেট মূল্য

মুসা খান মসজিদ পরিদর্শন করতে কোন প্রকার ফি প্রদান করতে হয় না।

পরিদর্শনের সময়

দিনের যে কোন সময় পরিদর্শন করতে পারেন।

কীভাবে যাবেন ?

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সাভারগামী বেশকিছু বাস সার্ভিস চালু আছে। সেই বাসগুলিতে করে সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ড যেতে হবে। সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ড থেকে পূব দিকের রাস্তায় রিক্সা ভাড়া নিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন ?

খাবারের জন্য সাভার বাজারে খাবার পাবেন সেখান থেকে নিঃসন্দেহে আপনার পচন্দের খাবার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে ৫ তারকা মানের হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ মানের হোটেলও পাবেন। ৫ তারকা হোটের মধ্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ, হোটেল লা মেরিডিয়েন, র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ম্যাপ

রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবির গুগল ম্যাপ যুক্ত করা হয়েছে। যা দেখে আপনি সহজেই আপনার পথ খুজে পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *