ট্রিপল আর মুভি রিভিউ

ট্রিপল আর মুভির রিভিউ পড়ার আগে। ট্রিপল আর তেলুগু মুভির অভিনেতা, অভিনত্রী, নির্মাতাসহ সকল কলাকুশলী ও মুক্তি সম্পর্কিত সকল তথ্য নিচের প্রদত্ত লিংক থেকে জেনে আসুন।

ট্রিপল আর মুভি

ট্রিপল আর সিনেমা সম্পর্কিত তথ্যাদি জানা থাকলে আমাদের রিভিও পড়ে মজা পাবেন এবং আপনি আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আর হ্যা আপনি চাইলে আপনার প্রিয় মুভি বা তারকার সম্পর্কে আপনার মতামত বা রিভিউ লিখে আমাদের পাঠাতে পারেন। তো কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক……

ট্রিপল আর মুভি রিভিউঃ মাস্টারপিস মুভি

  • পার্সোনাল রেটিংঃ ১০/১০
  • রিভিউকারীঃ আরিয়ান

অনেকদিন যাবত রিভিউ লিখবো কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে উঠে নাই। ফাইনালি আজ প্রিয় প্লাটফর্ম একটি বাংলাদেশে নতুন আরেকটি মুভির রিভিউ নিয়ে হাজির হলাম। আর আজকেও একটু ব্যতিক্রমভাবে অর্থাৎ আমার নিজের মতো করে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখপূর্বক রিভিউটি লিখতে যাচ্ছি। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

টাইটেল

প্রথমেই বলে নেই মুভির টাইটেল সম্পর্কে। মুভির টাইটেল ট্রিপল আর যা রাইস রোর রিভোল্ট অর্থাৎ বিদ্রোহের গর্জন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোমরম ভীম ও আল্লুরী সীতারাম রাজুর বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে রাখা হয়েছে। মুভিটির টাইটেল ট্রিপল আর, যা ছিলো একদম যথার্য টাইটেল।

কাস্টিং, রোল ও অভিনয়

এবার আশা যাক কাস্টিং, রোল ও অভিনয়ের দিকে। এই অংশে মূল চরিত্রের কিছু তারকাদের সম্পর্কে আলাদা আলাদা ভাবে জানা যাক।

রামচরণঃ মুভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আল্লুরী সীতারাম রাজু চরিত্রে দেখতে মিলবে আমাদের সকলের প্রিয় মেগা পাওয়ার স্টার রামচরণকে। অন্ধ্র প্রদেশের একজন বিপ্লবী নেতা, যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছিলেন। আমার প্রিয় ও মনোমুগদ্ধকর চরিত্র ছিলো আল্লুরী সীতারাম রাজু। ভরপুর ও স্টাইলিশ একশনে ভরপুর ছিলো চরিত্রটি। একই সাথে রামচরণের অভিনয় ছিলো প্রশংশনীয়। মুভির শুরুতেই রামচরণের ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে হিন্দুস্থানি ভিড়ের সাথে থাকা লড়াই ছিলো দেখার মতো। জিদ্দি ব্রিটিশ অফিসার ওই সিনেই আমার মন জয় করে নিছে। আমার মনে হয়, আমার মতো আরও অনেকই আছেন, যার সিনটি দেখার পর সিটি মারতে ভুলেন নাই। আমার কাছে ট্রিপল আর মুভির সেরা চরিত্র আল্লুরী সীতারাম রাজু এবং সেরা অভিনয় করেছেন দক্ষিণী অভিনেতা রামচরণ।

এন.টি. রামা রাও জুনিয়রঃ মুভিটি দেখার আগে অনেক নিউজ দেখছিলাম যেখানে বরাবরই রাজামৌলি স্যার বলে আসছেন দুই ক্যারেক্টার ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আমার তেমন মনে হয় নাই। চরিত্র সমতা ছিলো না তবে মুভিটির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলো কোমরম ভীম। তেলেঙ্গানার একজন গোন্ড উপজাতি নেতা কোমরম ভীম, যিনি হায়দ্রাবাদ রাজ্যের মুক্তির জন্য হায়দ্রাবাদের নিজামের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। যে চরিত্র ছাড়া মুভিটি জমতো না। ইমোশনাল এক স্টোরি দিয়ে কোমরম ভীম চরিত্রটি টানছিলো। তারপর আল্লুরী সীতারাম রাজু সাথে বন্ধুত্ব এবং সংঘর্ষ সবই ছিলো দেখার মতো। একই সাথে বাইক স্টান্ট গুলি নিখুত। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন এন.টি. রামা রাও জুনিয়র। চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে।

ইন্ডিয়ান ঐতিহাসিক মহান ব্যক্তি কোমরম ভীম ও আল্লুরী সীতারাম রাজু, তাদের এক ফ্রেমে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজামৌলি স্যার।

 

অজয় দেবগনঃ মুভিতে আল্লুরী সীতারাম রাজুর পিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অজয় দেবগন। যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছিলেন এবং শহীদ হোন। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলো ভেঙ্কটা রামা রাজু। স্পেশাল এপেয়ারেন্স হলেও ধামাকারদার পার্ফরমেন্সছিলো।

আলিয়া ভাটঃ মুভিতে আল্লুরী সীতারাম রাজুর কাজিন এবং ফিওন্সে সীতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট। চরিত্রটি মোটামুটি এভারেজ গুরুত্বপূর্ণছিলো। সিনেমার হিরোইন প্রয়োজন হয় তাই রাখা আরকি। তবে আলিয়ার সাউথ ইন্ডিয়ান লুক ছিলো প্রশংশনীয়। তবে অভিনয়ে নতুনত্ব কিছু খুজে পাই নাই।

শ্রেয়া শরণঃ মুভিতে আল্লুরী সীতারাম রাজুর মা, সারজিনি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রেয়া সরণ। বরাবরেই মতোই অভিনয় ছিলো শ্রেয়া শরণের।

এই চরিত্রগুলির বেশী ভূমিকা ছিলো মুভিটিতে। মনে হচ্ছিলো যে যার অবস্থানে একদম পারফেক্ট ছিলো। এছাড়া সামুথিরাকানি, রে স্টিভেনসন, অ্যালিসন ডুডি, অলিভিয়া মরিস, ছত্রপতি সেখর, মকরন্দ দেশপান্ডে, রাজীব কানাকালা, রাহুল রামকৃষ্ণ, এডওয়ার্ড সোনেনব্লিক, আহমারিন আঞ্জুম, টুইঙ্কেল শর্মা, চক্রীসহ আরও অনেকে ছিলো। তারা যে যার চরিত্রগুলি যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

মেকিং

মেকিং এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আমার মনে আসে মুভির বিজিএম এর কথা, সিনেমাতে অস্থির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিলো। যা এম এম কিরাভানি করেছেন। কথায় আছে, বি জি এম সিনেমার প্রাণ, মুভিটির বিজিএম আমার অনেক পছন্দনীয় ছিল। আর এই মুভির নাতু নাতু গানটা আমার অনেক পছন্দের ছিলো। বিশেষ করে, ডান্স পার্ফর্মেন্স ছিলো অস্থির লেভেলের।

মুভিটির ভিজুয়াল মেকিং এর ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ এবং এস এস রাজামৌলি এর কথা। এর আগে রাইটার ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদের ছত্রপতি,পান্ডু রাঙ্গা ভিট্টলা (কন্নড়), বিক্রমকুডু, ইয়ামাডোঙ্গা, মিত্রুডু, মগধীরা, সিরুথাই, রাউডি রাঠোর, বাহুবলী: দ্য বিগিনিং, বজরঙ্গি ভাইজান (হিন্দি), জাগুয়ার, বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন, মেরসাল (তামিল), মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অফ ঝাঁসি (হিন্দি), থালাইভি (তামিল এবং হিন্দি) মুভি দেখছিলাম, বেশীরভাগ মুভিই আমার অনেক ভালো লাগছে।

অপরদিকে এস এস রাজামৌলির স্টুডেন্ট নং ১, সিংহদ্রি, সাই, ছত্রপাথি, বিক্রমকুডু, ইয়ামাডোঙ্গা, মাগধীরা, মরিয়দা রামান্না, এগা, বাহুবলী: দ্য বিগিনিং, বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন সবই গুলিই দেখছি এবং অনেক পছন্দের। এস এস রাজামৌলির মেকিং সব সময় থাকে নিপুণ এবং ভিন্নতার স্বাদ। বিশেষ করে গল্প এবং শুটিং সেট। গল্পের বিষয়ে একটু পড়েই বলি। মুভিটির ক্যামেরা ফ্রেমিং, ইডিটিং, কালার, স্ক্রিন প্লে সব কিছু একদম ফাস্ট ক্লাস ছিলো, খুবই ভালো লেগেছে।

প্লট

এবার সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বলি। আমার মনে হয়, সিনেমার গল্পই সিনেমার ভালো খারাপের পেছনে থাকে। একটা ভালো গল্প দিতে পারে জনপ্রিয়তা আবার একটা খারাপ গল্প নিমিষেই ডুবিয়ে দিতে পারে, যত ভালো মেকিং বা কাস্ট থাকুক না কেন। তাই গল্প নির্বাচন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। ট্রিপল আর মুভির গল্প একদম আলাদা এবং অসাধারণ লেগেছে। আল্লুরী সীতারাম রাজু, কোমরম ভীম, ভেঙ্কটা রামা রাজু, সীতা, সারজিনি, এডওয়ার্ড চরিত্র অনেক সুন্দর ভাবে গল্পে ফুটিয়ে তুলছে। অনেকগুলি চরিত্র মনে রাখার মতো ছিলো। আর আমার কাছে এটাই প্লাস পয়েন্ট মনে হইছে। গল্পে সব সময় টান টান একটা উত্তেজনা ছিলো। এক কথায় বলতে গেলে, অসাধারণ গল্প ছিলো।

ওভারঅল

সর্বোপরি বলা যায়, অনেকদিন পর অনেক ভালো মানের একটা মুভি দেখতে পেলাম, এই বছরের সেরা মুভি গুলির মধ্যেই একটা মুভি এটি। কোথাও এক মূহুর্তের জন্য বিরক্ত লাগে নাই বা বোর করার মতো এক ঘেয়ামো কিছু ছিলো না। গুরুত্বপূর্ণ দুইটি চরিত্রই অনেক ভালো লেগেছে। এছাড়া গল্পও অনেক ভালো লেগেছে।

আমি চাই না কোন প্রকার স্পয়লায় দিয়ে আপনাদের মুভিদেখার ইন্টারেস্ট নষ্ট করতে তবে চরিত্র ডিস্ক্রাইব করতে গিয়ে কিছু কিছু লিক করছি। আর করতে চাই না। আপনিও দেখতে পারেন আশা করছি ভালো লাগবে। মুভিটিতে আমি অন্যরকম বন্ধুত্ব, দেশপ্রেম, অনুভুতি, ত্যাগ এবং বিদ্রোহের ছাপ দেখতে পাইছি।

আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি আবার সময় করে অন্য কোন মুভি নিয়ে লিখবো। আপনাদের রিভিউটি ভালো খারাপ যাই লাগুক কমেন্ট করে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *