নর্থব্রুক হল – ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান

আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি নর্থব্রুক হল কে ঘিরে। নর্থব্রুক হল কোথায় অবস্থিত, ইতিহাস, কাঠামো, কেন যাবেন, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এই সকল বিষয় নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন টি সাজানো হয়েছে। আশা করি, প্রতিবেদনটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।

নর্থব্রুক হল (বর্তমানে স্থানীয়ভাবে লালকুঠি নামে পরিচিত) বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সৌন্দর্যময় স্থাপত্যিক একটি নিদর্শন যা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত। ১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক ঢাকা সফরে এলে এ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মাণ করা হয়। এখানে একটি নাট্যালয় রয়েছে। তৎকালিন ঢাকার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা গভর্নর জেনারেল নর্থব্রুকের সম্মানে এই ভবনের নাম দেন নর্থব্রুক হল।

১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা পৌরসভা সংবর্ধনা দেয়। বর্তমানে ভবনটির দায়িত্ব রয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। জরাজীর্ণ হওয়ায় এটি আর মিলনায়তন হিসেবে বর্তমানে (২০১৬ খ্রিঃ) ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ ভবনটি সংলগ্ন সড়কটি নর্থব্রুক হল রোড নামে পরিচিত। মূল ভবনের পশ্চাৎভাগে একটি গ্রন্থালয় রয়েছে।

অবস্থান

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাংলাবাজার থেকে ১০০ গজ এগিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজ ঘাট ঘেশে ফরাশগঞ্জ মহল্লায় ১ নং ফরাশগঞ্জে অবস্থিত।

  • জেলাঃ ঢাকা
  • উপজেলাঃ ঢাকা

ইতিহাস

১৮৭৯ সালের শেষের দিকে নর্থব্রুক হলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ভাওয়াল রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এটি নির্মাণের জন্য ১০ হাজার টাকা দান করেন। তবে ভবনটি ১৮৮০ সালের ২৫ মে উদ্বোধন করা হয়। সেসময়ে ঢাকার কমিশনার নর্থব্রুক হলের উদ্বোধন করেন। তৎকালীন পদস্থ রাজকর্মচারি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সভা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এ ভবনে আয়োজন করা হতো।

পরবর্তী সময়ে নর্থব্রুক হলের নামানুসারে সংলগ্ন সড়কের নামকরণ করা হয় নর্থব্রুক হল রোড। ১৮৮২ সালে ভবনটি টাউন হল থেকে পাঠাগারে রূপান্তর করা হয় এবং এর সাথে জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘর সংযুক্ত করা হয়। স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর বই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৮৮৭ সালে এই পাঠাগারের জন্য বিলেত থেকে বই আনা হয়েছিল। ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে ঢাকা পৌরসভা সংবর্ধনা দেয়।

পাকিস্তান আমলে নর্থব্রুক হল তার ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পরে পাঠাগারটি। ধীরে ধীরে কমতে থাকে এর পাঠক সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পাঠাগারের অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরও গ্রন্থাগারের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নর্থব্রুক হলের আশপাশে নির্মিত হয় সম্মেলন কেন্দ্র ও গণমিলনায়তনের মতো ভবন যা এর আকর্ষণকে অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে।

২০০৮ এর বিধি অনুযায়ী রাজউক কর্তৃক মহা পরিকল্পনাভুক্ত স্থাপনা হিসেবে নর্থব্রুক হলকে সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে হলটি। হল এলাকায় বর্তমানে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, ৭৯ নম্বর কমিশনারের কার্যালয়। ডিসিসি কমিউনিটি সেন্টার এবং ফরাসগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির কার্যালয় অবস্থিত। গ্রন্থালয়ের অধিকাংশ বই জ্বীর্ণ হয়ে পড়েছে।

কেন যাবেন?

ভ্রমন পিপাসু মানুষ দের কে যদি এই কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে তারা এই কথা অহেতু হাসির ছলে উড়িয়ে দিবে । কারন, ভ্রমন পিপাসু মানুষদের কাছে এই কথা মূল্যহীন। তবুও বলি,

এখানে অশ্বক্ষুরাকৃতির অর্ধবৃত্তাকার খিলান, উত্তরে প্রশস্ত প্রবেশদ্বার, খাড়া উত্তরে চারটি অষ্টভুজ মিনার, আলঙ্করিক নক্সামন্ডিত নিচু পাঁচিল এবং সুউচ্চ চূড়াসমূহ মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারকচিহ্ন বহন করছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে পরিদৃষ্ট হয় ভবনটির একধাপবিশিষ্ট গাঢ় লাল রঙের বিশাল গম্বুজ, সুউচ্চ চূড়া ও নিচু পাঁচিলসহ অনেক নিদর্শন দেখতে পারবেন।

টিকেট মূল্য

বিনামূল্যে নর্থব্রুক হল পরিদর্শন করতে পারবেন।

পরিদর্শনের সময়

দিনের যে কোন সময় নর্থব্রুক হল পরিদর্শন করতে পারবেন।

কীভাবে যাবেন ?

ঢাকার যেকোন স্থান থেকে নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা অথবা বাসে চড়ে গুলিস্তান বা সদরঘাটে এসে সরাসরি রিক্সা ভাড়া নিয়ে নর্থব্রুক হল বা লালকুঠি যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন?

ঢাকার শহরের আনাচে-কানাচে অগণিত ভালো ভালো হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। আপনি সেগুলি থেকে আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া পুরান ঢাকার বিখ্যাত কাজি আলাউদ্দিন রোডের হাজির বিরিয়ানি, হোটেল রয়েলের পেস্তা বাদামের শরবত, বেচারাম দেউড়ি রোডে নান্নার মোরগ পোলাও, লালবাগ শাহী মসজিদের সাথে মোহন মিয়ার জুস এবং হানিফের তেহরি সহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের স্বাদ পাবেন।

কোথায় থাকবেন?

রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে ৫ তারকা মানের হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ মানের হোটেলও পাবেন। ৫ তারকা হোটের মধ্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ, হোটেল লা মেরিডিয়েন, র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ফকিরাপুল, পল্টন, গুলিস্তান এবং পুরান ঢাকাতে কম খরচে থাকার অসংখ্য আবাসিক হোটেল রয়েছে।

ম্যাপ

নর্থব্রুক হল গুগুল ম্যাপে যুক্ত করা হয়েছে। যা দেখে আপনি সহজেই আপনার পথ খুজে পাবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *